স্বপ্নের পায়রা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ উপকূলের কৃষি, পর্যটন, শিল্প বিকাশের অবারিত সম্ভাবনা দেখছেন এ অঞ্চলের মানুষ। যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন হওয়ায় এর সুফল মিলবে সামগ্রিক অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায়। বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা এই সম্ভাবনার কথা জানান।
বরিশাল শহর থেকে পটুয়াখালী সদরের দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিলোমিটার, পায়রা বন্দরের দূরত্ব ৯১ কিলোমিটার ও কুয়াকাটার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার। এই সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটা পৌঁছা যাবে মাত্র সাত ঘণ্টায়। সারা দেশের সঙ্গে কুয়াকাটার দূরত্ব হবে কক্সবাজারের প্রায় অর্ধেক।
গত কয়েক বছরে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে চারটি সেতু নির্মাণ করেছে সরকার। বাকি ছিল পায়রা। পায়রা নদীর ফেরিতে পার হতে দীর্ঘ যানজটের কারণে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যেত। এখন সেই ভোগান্তি লাঘব হলো।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালে করা পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় (সংশোধিত) পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেতুটি বাস্তবায়নের ফলে এ অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এতে কুয়াকাটা, তালতলীর টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা, বরগুনা, পাথরঘাটাসহ–সংলগ্ন এলাকা এমনকি সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরের সঙ্গে মোংলা বন্দর, রাজধানী ঢাকা ও সারা দেশের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, তালতলী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজ নির্মাণশিল্পের পরিকল্পনা গতি পাবে। ফলে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ক্ষেত্র অভূতপূর্ব প্রসার ঘটবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে।
সমীক্ষায়, ২০১১ সালের এক জরিপের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, লেবুখালী ফেরি পারাপারে প্রতিটি যানবাহনের সর্বনিম্ন ১১ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট বিলম্ব হয়েছে। সেতু চালু হওয়ায় এই সময় হ্রাস পাবে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি যানবাহনের সংরক্ষণ ব্যয় কমবে।
এ অঞ্চলের বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলকে মূলত তিনটি প্রধান নদী সারা দেশে থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এর একটি পায়রা, পিরোজপুরের কচা ও পদ্মা। এই তিনটি নদীতেই সেতু হয়ে যাচ্ছে। তিন সেতুকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণ-পশ্চিমের সঙ্গে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হতে চলেছে। পায়রা সেতু চালু হয়ে যাচ্ছে, পদ্মার কাজও শেষের পথে আর পিরোজপুরে কচা নদীর ওপর বেকুটিয়ায় সেতুর কাজও শেষের পথে। আগামী বছর এটি চালুর আশা রয়েছে। পায়রা ও বেকুটিয়া সেতু দুটি বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ও পায়রা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করবে।
আপনার মতামত লিখুন :