Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

বিএসএফ’র ধাওয়ায় নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু


প্রকাশের সময় : ১ বছর আগে
বিএসএফ’র ধাওয়ায় নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে নীলকমল নদী সাঁতরে বাংলাদেশে ফেরার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ধাওয়ায় পানিতে ডুবে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে বিএসএফ। রবিবার (৩ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে জিরোলাইনে ভারতীয় অংশে নীলকমল নদী থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ। ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৪৩ এর ৫০ গজ ভারতের ভেতরে নীলকমল নদীতে দুই শিশুর মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। এ খবর দুই দেশের সীমান্তের স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সীমান্তে বিজিবি অতিরিক্ত টহল জোরদার করে এবং ভারতীয় সেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিহত দুই শিশু পারভীন (৯) ও সাকিবুর (৫) কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সুখাতি গ্রামের রহিজ উদ্দিন ও তার স্ত্রী সামিনা বেগম দম্পতির সন্তান। প্রায় ১৬ বছর আগে রহিজ উদ্দিন ও তার স্ত্রী সামিনা খাতুন ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুরে ইটভাটায় কাজ করতে যান। সেখানেই তাদের দুই সন্তানের জন্ম হয়। বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও শিশুদের জন্ম ভারতে হওয়ায় তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় বিজিবির কাছে শিশুদের মরদেহ হস্তান্তর না করে ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ। নিহত শিশুর চাচা আজিজুল হকসহ স্থানীয়রা জানান, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ইটভাটায় কাজ শেষে দুই দেশের দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য শুক্রবার (১ জুলাই) রাতে স্ত্রী ও দুই সস্তানসহ কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার শেউটি-১ সীমান্তে এলাকায় আসেন রহিজ উদ্দিন। গভীর রাতে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪৩ এর পাশে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত এলাকার নদী পাড়ে নিয়ে আসা হয় তাদের। তিনি আরও জানান, এসময় লোকজনের কথার শব্দ শুনে ভারতীয় শেউটি-১ ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাদের ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুই সন্তনকে নিয়ে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন সামিনা বেগম। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে হাত ফসকে নদীতে ডুবে যায় দুই শিশু। নিখোঁজ হওয়ার ২ দিন পর রবিবার তাদের মরদেহ ভেসে উঠে। নিহত শিশুর বাবা রহিজ উদ্দিন জানান, পরিবার নিয়ে নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য ভারতীয় দালালদের ২২ হাজার রুপী ও দেশের দালালরা ভারতীয় ৪০ হাজার রুপী নিয়েছে। পরে শুক্রবার রাতে তাদেরকে সীমান্তে কোনো এক বাড়িতে রাখেন দালালরা। সেখানে আরও ২০-২৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ছিল। গভীর রাতে আমাদের নদীর পাড়ে নিয়ে আসলেও ভারতীয় দালাল সিরাজুল ইসলাম, নয়ন মিয়া ও ময়না মিয়া আরও বাংলাদেশি ১০ হাজার টাকা নিয়েছে বলে জানান তিনি। রহিজ উদ্দিন আরও বলেন, নীলকমল নদীর পাড়ে আসার কিছুক্ষণ পর ভারতের শেউটি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর তাদের ধাওয়া দেয়। তিনি জিনিসপত্র নিয়ে নদীর মাঝে চলে যান। আর তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে নামেন। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানে না। স্রোতের টানে সন্তানরা মায়ের হাত থেকে ফসকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পানিতে ডুবে অনেক চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করলেও সন্তানদের সন্ধান পাননি তিনি। তিনি তার দুই শিশুর মরদেহ দেশে আনার জন্য দুই দেশের সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। লালমনিহাটের ১৫ বিজিবি কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার কবির হোসেন শিশু দুটির মরদেহ বিএসএফ উদ্ধার করেছে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় বিএসএফ নীলকমল নদী থেকে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে দুই দেশের কোম্পানি পর্যায়ে এক সৌজন্যমূলক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।