লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের খরে¯্রাতা ভুলুয়া নদীতে নেই আগের সেই জৌলূস। নাব্য সংকট, অবৈধ দখল আর প্রভাবশালীদের বাঁধের কারণে পলি জমে কমে গেছে নদীর প্রশস্ততা। দীর্ঘ বছর ধরে খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি শুকিয়ে যায়, এতে ব্যাহত হয় চাষাবাদ। নদীর ওপর প্রভাবশালীদের বাঁধ নির্মাণের কারণে বর্ষায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে নদীকেন্দ্রীক জীববৈচিত্র্য। এ অবস্থায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আশ^াস স্থানীয় প্রশাসনের। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ বরাদ্দ পেলে নদী খননের কাজ শুরু হবে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে ভুলুয়া নদী। ৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর প্রস্থ ছিল ৫০০ মিটার। দখল, অবৈধ বাঁধ নির্মাণ আর পলি জমে নদীর প্রস্থ এখন দাঁড়িয়েছে ৮৫ মিটারে। নদীটি খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে হেঁটেই পাড় হওয়া যায়। পানির অভাবে হুমকির মুখে মাছসহ নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য। এর ফলে কমে গেছে আশেপাশের কৃষি উৎপাদনও।
স্থানীয়রা জানালেন, অবৈধ দখল আর প্রভাবশালীদের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভুলুয়া নদীতে এখন আর জোয়ার—ভাটা নেই। এতে করে ইরি—বোরো চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকেরা। আবার প্রভাবশালীদের অবৈধ বাঁধের কারণে বর্ষায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুই মৌসুমেই আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা গ্রামের কৃষক ধনু মিয়া জানান, এক সময় নদীটির বুকে বড় সাম্পান চলাচল করতো। জাল ফেলে মাছ ধরে জীবন—জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয়রা। আর এখন প্রভাবশালীরা এতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে দখল করে রেখেছে। যার কারণে এখন আর নদীতে নেই জোয়ার—ভাটা। আবার বর্ষার মৌসুমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।
একই এলাকার কৃষক আমানত উল্যাহ জানান, অবৈধ দখল ও খননের অভাবে এক সময়ের খরে¯্রাতা ভুলুয়া নদী এখন মৃত। নদীতে পানি না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। এতে ব্যাহত হয় ইরি—বোরো চাষাবাদ। খালি পড়ে থাকে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষক। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও নদীটি খননের উদ্যোগ নিতে সরকারে কাছে দাবী জানিয়েছেন তিনি।
কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়নের সদস্য ফজলে এলাহী শামীম জানান, নদী খননের অভাব ও অবৈধ দখলদারদের কারণে ব্যহত হচ্ছে এ অ লের কৃষি উৎপাদন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার অবহিত করা হলেও কার্যকরি কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, অবৈধ দখলদার যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুলুয়া নদীর প্রমত্তা ভাব ফিরে আনার জন্য একটি ডেলিকেটেড প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার বলেও জানান ইউএনও।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহ্মেদ জানালেন, ভুলুয়া নদীর ১৮ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য ইতোমধ্যে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শীঘ্রই নদী খননের কাজ শুরু করা হবে।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর ্উপজেলার মানুষের দুঃখ এই ভুলুয়া নদী। নদীটি খননের উদ্যোগ নিলে, এ অ লের কৃষি কাজে আমূল পরিবর্তন আসবে। ভাগ্য বদলাবে হাজারও কৃষকের, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
আপনার মতামত লিখুন :