Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

লক্ষ্মীপুরে হুমকিতে কৃষি ও জনজীবন ইটভাটায় কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ


প্রকাশের সময় : ১ বছর আগে
লক্ষ্মীপুরে হুমকিতে কৃষি ও জনজীবন ইটভাটায় কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার বাংগা খাঁ ইউনিয়নের মাইচ্চার মাঠ নামক স্থানে কৃষকদের বিশাল ফসলি জমিতে প্রতিদিন এ অবৈধ কর্মকান্ড চালাচ্ছে স্থানায় প্রভাবশালী একটি চক্র। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমির মালিকদের বিভিন্ন প্রলোভনে ফাঁদে পেলে মাটি কেটে নিচ্ছেন তারা। এতে নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বর্গাদার কৃষকরা। অপরদিকে ট্রাকে করে মাটি নেয়ায় নষ্ট হচ্ছে রাস্তা ঘাট, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের।
এ ঘটনায় গত (৩ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভাবে ফসলি জমি থেকে ইটভাটায় মাটি সরবাহের সাথে জড়িত থাকায় ৯ জনকে আটক করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মকবুল হোসেন। তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে আটককৃতদের ১৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং ফসলি জমির মাটি না কাটার শর্তে মুসলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায় মূল হোতা প্রভাবশালীরা। তবে প্রশাসনের এ অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরের দিন গতকাল (৪ জানুয়ারী) সকাল থেকে পুনরায় শুরু করা হয় একই স্থান থেকে ফসলি জমির থেকে ইটভাটায় মাটি সরবরাহের কার্যক্রম। এতে স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি কার্যক্রমের মূল পরিচালনায় রয়েছে ১২/১৩জন স্থানীয় প্রভাবশালী। এরা হচ্ছেন, শেখ জামান স্বপন ও তার শেয়ার পার্টনার মো. ফারুক। শেখ জামান স্বপন বাংগাখাঁ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ—সভাপতি। এছাড়াও রয়েছে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুবেল ও তার ভাই রবিন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ ও তার শেয়ার পার্টনার রহিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিহাদ, সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফরহাদুল ইসলাম ওরপে সৈনিক ফরহাদ, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি বাসার, স্থানীয় আদিলপুর এলাকার ফরহাদ, আলমগীর হোসেন, ইউসুফ, শিপন, কিরণ, শওকত, সুমন, রাপু ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজাহান মেম্বার। প্রভাবশালীরা কিছু সংখ্যক ফসলি জমির মালিকদের লোভে পেলে জমির মাটি কেনে নিয়ে যায়। এতে আশপাশের জমি নষ্ট হয়ে পড়ায় তারাও বাধ্য হয়ে নিজেদের জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয় কেউই প্রতিবাদ করতে পারে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে বাংগাখাঁ ইউনিয়নের মাইচ্ছার মাঠ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে একটি মাঠেই প্রায় ১৩৫ কানি ফসলি জমি। শ্রমিক দিয়ে এসব জমি থেকে মাটি কেটে একের পর এক পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। দূর থেকে মনে হবে ফসলি মাঠে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকের বিশাল মেলা বসেছে। রাতেও এ মাঠে আলো জালিয়ে চলে মাটি কাটা ও ইটভাটায় সরবরাহের কাজ। একই ভাবে রাস্তার উল্টো পাশের ফসলি জমিগুলোতেও চলছে মাটি কাটা ও ইটভাটায় সররাহের কার্যক্রম।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আরো জানান, মাইচ্ছার মাঠের ১৩৫ কানি ফসলি জমির মধ্যে স্থানীয় হারুনুর রশিদের ৯ শতাংশ জমির মাটি, বকুল কাজীর ৩০ শতাংশ, আনার উল্যার ৪২ শতাংশ, হাফিজ উল্যার ৪২ শতাংশ, আলমগীর কাজীর ৬০ শতাংশ ও মো. হেলালের ১৮ শতাংশ ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিহাদ। স্থানীয় মুরি ব্যবসায়ী সর্দারে ৩৩ শতাংশ ও আবুল কাশেম এর ৩০ শতাংশ জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ ও তার শেয়ার পার্টনার রহিম, স্থানীয় নুরুল আমিনের মালিকাধীন ৬৬ শতাংশ জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফরহাদুল ইসলাম ওরপে সৈনিক ফরহাদ। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে থেকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছে এসব প্রভাবশালী চক্র।
স্থানীয় শামছুল ইসলাম, নুরুল আলমসহ কৃষকরা জানান, মাইচ্ছার মাঠের ফসলি জমি গুলোর মালিকদের মধ্যে অনেকই কৃষকদের দিয়ে বর্গা চাষাবাদ করে থাকেন। তাই মাটি দস্যুদের টাকার লোভে পড়ে তারা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে পাশের জমি মাটি কাটায় নিচু হওয়ায় সেচের পানি না পাওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে নিজের জমির মাটিও বিক্রি করছে অনেকে। এতে সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ জমি থেকে মাটি কাটার কোদালের দু’ কোপ পরিমান মাটি বাবত ৩০/৩২ হাজার টাকা হারে পাচ্ছে জমির মালিকরা। এতে জমির মালিকরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বর্গা চাষিরা। অপরদিকে জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ায় হুমকিতে পড়বে ফসলের উৎপাদন।
আরেক কৃষক নুরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ৫ গন্ডা জমির চার পাশের জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এতে আমার জমি উচু হয়ে পড়ায় সেচ দিতে পাড়ছি না। বাধ্য হয়ে নিজে মেশিন বসিয়ে ফসলি জমিতে পানি দিতে হচ্ছে। এতে আমার অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। যেখানে সেচের পানি ২০০/৩০০ টাকায় পেতাম। এখন তার খরচ পড়তেছে ৮০০/১০০০ টাকা। প্রভাবশালী ইটভাটায় মাটি বিক্রেতাদের হাত থেকে ফসলি জমি ও কৃষকদের ভাগ্য রক্ষায় প্রশাসনের কষ্টোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় আবদুল আলিম, কলেজ ছাত্র সাহেদুল ও রিকশা চালক রহমান বলেন, পাকা রাস্তা দিয়ে এসব পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক ঘণঘন যাতায়াতের ফলে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাসহ আশপাশের বাড়িঘর। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, হুমকিতে পড়ছে স্থানীদের জীবনযাত্রা। তাই দ্রুত প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন তারা।
এদিকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে ফসলি জমি ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংগাখা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ—সভাপতি শেখ জামান স্বপন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিহাদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত মাটি বিক্রেতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল মাটি বিক্রির বিষয় স্বীকার করে বলেন, আমি মাত্র তিনটি স্পট থেকে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করি। আমার থেকে আরো বড় বড় ৮/১০জন প্রভাবশালীরা আছে। তারা বিভিন্ন স্পট থেকে মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে আসছে। তাদের বন্ধ করেন, তাহলে আমিও বন্ধ করে দিবে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফরহাদুল ইসলাম সৈনিক ফরহাদ বলেন, আমার ৪টি পিকআপ ভ্যান আছে। মাটি বিক্রিতাদের কাছে বাড়া দিয়েছি। তারা আমাকে গাড়ি ভাড়ার টাকা দেয়। আমি মাটি ক্রয়—বিক্রয়ের সাথে জড়িত নয়। আমার বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিপ্তরের উপ—পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের যে মাটি (টপ সয়েল) ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এটা কৃষি উৎপাদনের জন্য খুবই ক্ষতিকর। জমির সকল রাসায়নিক তথা উৎপাদনের সকল প্রক্রিয়া থাকে টপ সয়েলে, যা থেকে উদ্ভিদ খাদ্য গ্রহণ করে। জমির এ টপ সয়েল তৈরি হতে ২০—৫০ বছর সময় লেগে যায়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন দৃষ্টিপাত করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, যেখানে সরকার ইি পরিমান জমি অনাবাদি রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে কৃষি উৎপাদনে ব্যঘাত ঘটাচ্ছে। এ ঘটনায় ৯জনকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।