Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

নির্মানের ৩ বছরেই রামগতিতে মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাসে ফাটল


প্রকাশের সময় : ২ years ago
নির্মানের ৩ বছরেই রামগতিতে মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাসে ফাটল

বাড়ির সামনে পাথরের নামফলকে লেখা বীর নিবাস। লাল—সবুজ রঙে রাঙানো দেয়াল। দেয়াল জুড়ে যেন বাংলাদেশের পতাকারই প্রতিচ্ছবি। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্য সরকারের দেয়া লাল—সবুজ রঙের বাড়ি বীর নিবাস এ গুলো। নির্মানের বছর না ঘুরতেই এসব পাকা বাড়ি এখন বসবাসের অনুপযোগী। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বেশ কয়েকটি বীর নিবাস ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। এসব বাড়ির একাধিক স্থানে ফাটল ধরে প্রবেশ করছে বৃষ্টির পানি। ঘসে পড়ছে পলেস্তারা। অকেজো হয়ে গেছে শৌচাগার এবং নলকূপটিও।
ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধারা এ পাকা বাড়ি পেয়ে খুশিই হলেন। কিন্তু বছর না পেরোতেই ভবনের নানা স্থানে ফাটল ধরায় যাঁরা বীর নিবাসে উঠেছিলেন তাঁরা এখন আতঙ্কে আছেন। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় অল্প দিনেই সরকারের দেওয়া উপহারটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ও পুরোনা জানালা এবং গ্রীল এনে লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
অন্যদিকে ভবনের বেশির ভাগ অংশ খসে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টি আসলেই ভবনের ভিতর পানি প্রবেশ করে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগিদের একজন ৯নং চরগাজী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল্ল্যাহ চৌধুরী। বয়স্ক এই মুক্তিযুদ্ধা স্ত্রী এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে মহা টেনশনে রয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সমাধান না পেয়ে এখন বড় নিশ্বাস পেলছেন তিনি। কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ঘর হাইছি ‘হেইডা ভাইঙা গেছে’ এমন কথা বলতে বলতে নিয়ে প্রতিবেদককে নিয়ে যান বীর নিবাসে। কথা হয় তার স্ত্রী জোসনা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, “স্বামীর জীবন কাটছে মানুষের বাড়িতে কাজ করে। আমিও সাথে সাথে সারা জীবন কাটাইছি অন্যের বাড়ির ছনের চাউনি ও পাট কড়ির বেড়ার ঘরে। স্বামী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেই শেষ বয়সে একটা ঘর হাইছি হেইডাও ভাইঙা গেছে। ঘর করার সময় হেতাগোরে (ঠিকাদার) আমরা বার বার কইছি, ভালা করি ঘরটা করিয়েন। হেতারা আংগো কোন কথাই শুনেনি। অন ঘর কান ভাইঙা গেছে। বৃষ্টির সময় হানি হড়ে।”
মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রাামের নুরুল্ল্যাহ চৌধুরী। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পৈত্রিক কোন সম্পত্তি না থাকায় কয়েকযুগ কাটিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। স্থানীয় এক লোকের সহায়তা কিছু জমি নেন তিনি। ঐ জমিতে একটি ঘর করে দেন মুক্তিযোদ্বা মন্ত্রণালয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বীর নিবাস বারদ্দ পান নুরুল্ল্যাহ চৌধুরী। কিন্তু ঘর নিমার্ণ করার তিম বছর ঘুরতেই ঘরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। বীর নিবাসের ঘরে লাগানো
নেম প্লেটের তথ্যনুযায়ী দেখা যায় কাজটি বাস্তবায়ন করেন রামগতি উপজেলা এলজিইডি অফিস। কোন অর্থ বছরে ঘরটি বরাদ্দ বা নির্মাণ করা হয়েছে নেইম প্লেটে এর কোন তথ্যও দেয়া হয়নি। বাজেট কত, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম—ঠিকানা কিছুই নেই। এ বিষয়ে রামগতি এলজিইডি অফিসে বেশ কয়েকদিন ঘুরেও কোন রকম তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৬—১৭ অর্থ বছরে রামগতি উপজেলায় এই বীর নিবাস প্রকল্পের বরাদ্দ হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ঘরটি নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নিয়োজিত শ্রমিকদেরও তিনবেলা খবার সহ যাবতীয় খরচ বহন করছেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি আরো জানান, ঘরের জন্য আবেদন করার পর ঘর পেয়েছি। তিন বছর আগে সরকার আমারে ঘর করে দিয়েছে। ঘরের দরজাটাও পুরাতন। ঘরের কাজ ভাল হয়নি তাই নির্মাণ করার কিছু দিন পরেই ঘরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ে গেছে। এ বিষয়ে কেউ কোন খোজ খবরও নেয়নি। তিনি বয়স্ক মানুষ। উপজেলা দৌড়াদৌড়ি করেও কোন লাভ হচ্ছেনা। বিষয়টির সমাধান চেয়ে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী (এলজিইডি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও এর কোন সমাধান তিনি পান নি।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারকে পাকা বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বীর নিবাস নামের একতলা এই বাড়িগুলোয় দুটি শয়নকক্ষ, একটি প্রসস্থ বারান্দা ও শৌচাগার রয়েছে। শুধু আবাসিক ভবনই নয়, প্রতিটি বাড়িতে গরু, হাঁস, মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড বানিয়ে দেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে রয়েছে একটি করে নলকূপ। মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে বীর নিবাস প্রকল্পের আওতায় এসব বাড়ী যথাযথ ভাবে নির্মাণ না করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী (এলজিইডি) মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, যেসব ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। সেসব ভবন যাঁরা বানিয়েছেন তাঁদের আমরা ডেকে বিষয়টি জানতে চাইবো। ঠিকাদার বা প্রকৌশলী কার গাফিলতিতে এ অবস্থা হয়েছে। সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়ে কোন নয়—ছয় করতে দেয়া হবেনা।