Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

মেঘনায় রাতের অন্ধকারে চলে ইলিশ শিকার, ঘাটে চলে বেচাকেনা !!


প্রকাশের সময় : ২ years ago
মেঘনায় রাতের অন্ধকারে চলে ইলিশ শিকার, ঘাটে চলে বেচাকেনা !!

লক্ষ্মীপুর:লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ইলিশ ধরার ওপরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনায় রাতের অন্ধকারে শত শত টন ইলিশ ধরছে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত। এই প্রথম উপজেলায় কোষ্টগার্ড না রাখায় ও স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে চলছে ইলিশ ধরার উৎসব। তেমনি রাত ১টাথেকে ৪টা পর্যন্ত ঘাটগুলোতে চলে বেচাকেনা। মন্ত্রনালয়ে আবেদনসহ একাধিকবার ফোনে জানালেও কোষ্টগার্ড দেয়নি এবং রাতে অভিযানে বিপাকে পড়তে হয় মৎস্য কর্মকর্তাদের।বৃহস্পতিবার রাত ১টার পর মেঘনার চান্দার ঘাল, সুইসগেইট, আলতাফ মাষ্টারের মাছঘাট ও সাজু মোল্লার ঘাট এলাকায় মা-ইলিশ বিক্রির হাট বসে।নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে রাতে নদীতে অভিযান পরিচালনা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চাঁদপুরের হাইমচর ও চরভৈরবি থেকে শুরু করে পুরো রায়পুর মেঘনা নদী হয়ে সদরের মজু চৌধুরীর ল ঘাট নদীর মোহনা পর্যন্ত রাতে ট্রলারে চলে ইলিশ আহরণ। নদীতে রাতের বেলায় চলাচলকারী একাধিক নৌযান চালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জাটকা রক্ষা ও ইলিশ মাছ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের ষাটনল হতে রায়পুর হয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নি¤œ অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার নৌ-সীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই অভয়াশ্রম এলাকা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে।রায়পুরসহ জেলায় প্রায় ৪৫ হাজার জেলের মধ্যে নিবন্ধিত ২৭ হাজার ৮০০ জেলে রয়েছে।।
রায়পুর উপজেলা মৎস অফিস জানান, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত। মা ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই এ সময়ে ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী, ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এসময় ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। ইলিশ আহরণে বিরত থাকায় কয়েকদিন পরে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেবেন ভিজিএফ চাল।কিন্তু এতসব উদ্যোগের পরেও রাতের অন্ধকারে মেঘনা নদীতে চলছে ইলিশ শিকার। দিনের বেলা নদীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও রাতে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নদীতে যায় না। এ সুযোগে নৌকা নিয়ে মা ইলিশ ধরছে জেলেরা। রাত ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রায়পুরের চরবংশির ইউপির মোল্লারহাটের পাশে পানির ঘাট, হাজিমারা সুইজগেইট, আলতাফ মাষ্টারের মাছঘাট চান্দার খাল এবং হায়দরগঞ্জের সাজু মোল্লার মাছ ঘাট আসা-যাওয়ার পথে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

নৌযান পরিচালনাকারী সদস্যরা জানিয়েছেন,
লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর থেকে ঢাকার দিকে যাওয়া এবং ঢাকা থেকে পশ্চিমা লের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ল গুলো নদীতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে না। রাতে নদীতে জাল ফেলে জেলেরা নৌকায় বা ট্রলারে অবস্থান করেন। কোনও নৌযানকে তাদের জালের কাছাকাছি দিয়ে আসতে দেখা মাত্রই নৌকা থেকে উচ্চ আলো ছড়াতে সক্ষম টর্চলাইট দিয়ে দিক পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়। ল গুলোর চালকরা এসব টর্চের আলোতে দেখানো নির্দেশনা অনুযায়ী দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে জাল ফেলা এলাকা অতিক্রম করে। এখন মেঘনা অববাহিকা সংলগ্ন মেঘনা নদীতে রাতের স্বাভাবিক দৃশ্য।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেঘনা নদীর তীর ৬টি স্থানে পাড় ঘেঁষে রাত গভীর হলেই জমে ওঠে অবৈধভাবে ধরা ইলিশের হাট। এসব হাটেই রাতের বেলায় ধরা ইলিশ বিক্রি হয়ে যায়। ট্রলারে করে এসে এসব হাট থেকে ইলিশ কিনে নিয়ে গ্রামে বিক্রি করছেন তারা। আবার কেউ কেউ সংরক্ষণ করছেন। মাত্র তো কয়েকটা দিন। এর পরেই তো এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হবে, যখন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। দিনে প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে রাতই অনেকটা নিরাপদ মনে করছেন তারা। প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় প্রশাসন মা ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন। কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না ইলিশ নিধন কার্যক্রম। কেজি পরিবর্তে হালিধরে বিক্রি হচ্ছে কয়েকস্থানে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে রায়পুরের চরবংশি ও চরআবাবিলের চারজন জেলে জানিয়েছেন, মাছ ব্যবসায়ীরা এ সময় জেলেদের নদীতে জাল ফেলতে বাধ্য করেন। ধরা পড়া মাছের দাম বেশি দেওয়ারও লোভ দেখানো হয়। জেলেরা এসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেন। তাই ব্যবসায়ীদের অবৈধ নির্দেশ অমান্য করতে পারেন না জেলেরা। এ কাজে প্রশাসনের কেউ কেউ অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও তাদের বিষয়ে কেউ মুখ খোলে না।হায়দরগঞ্জের এক মাছ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ইলিশ ধরার এই নিষিদ্ধ ২২দিনে সাধারন মাছ রাখার বিকল্প ব্যবস্থা না করেই সকল বরফকলের বিদ্যুত লাইন কেটে দেয়ায় বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনকে জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি।
রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, এমন অভিযোগ এখন পর্যন্ত তার কাছে আসেনি। এইবারই প্রথম আমাদেরকে কোষ্টগার্ড না দেয়ায় আমরা মহাসমস্যায় পড়েছি। তবে শুরু থেকেই গত দুদিন দিনে এবং রাতে নৌপুলিশের পাশাপাশি আনসার ও ফাঁড়ি পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতে কোনও দুর্বৃত্ত নদীতে ইলিশ মাছ ধরছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। রায়পুরের সীমানায় যখন অভিযানে নামি তখন জেলেরা হাইমচর ও চরভৈরবি সিমানায় দ্রুত চলে যায়। তারপরেও বিষয়টি আমরা প্রতিদি নজরে রাখছি।