Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

লক্ষ্মীপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আজও মেলেনি স্বীকৃতি, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতা চান পরিবার


প্রকাশের সময় : ২ years ago
লক্ষ্মীপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আজও মেলেনি স্বীকৃতি, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতা চান পরিবার

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাধীন কুশাখালী ইউনিয়নের ফরাশগঞ্জ গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোমতাজ উদ্দিন। এক গ্রামে এই একজনই মুক্তিযোদ্ধা। তার রণাঙ্গণের বীরত্বগাঁথা কথাগুলো আজও তাঁর সন্তানদের অশ্রুন্সিক্ত করে। দেশের জন্য যুদ্ধ করে ৫০ বছর পরেও এখনো পায়নি তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু। তার ছেলে আরিফ চৌধুরী শুভ বাবার স্মৃতিচারণ করে এমন ক্ষোভের কথা জানান।
মোমতাজ উদ্দিনের পুত্র আরিফ চৌধুরী জানান, বাবা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎক ছিলেন। সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে পাকবাহিনীর বুলেট বিদ্ধ হন। বুলেট এসে তার পায়ে পড়ে এক আঙ্গুল ছিড়ে যায়। প্রচার বিমুখ তার বাবা চিকিৎসা সেবায় মনোনিবেশ থাকায় প্রথমে মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করাননি। পরে আর চেষ্টা করেও নানা প্রতিকুলতার সম্মুখিন হন। পরে অনেকটা রাগ ক্ষোভ অভিমান আর আক্ষেপ নিয়ে ২০১২ সালে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি মারা যান। এখন আমরা চেষ্টা করে এখনো আলোর মুখ দেখিনি।
খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের ফরাশগঞ্জ গ্রামে একজন মাত্র মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। গ্রামবাসীরা একবাক্যে বলে দেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোমতাজ উদ্দিনের কথা । সমাজ সেবক ও চিকিৎসক হিসেবে কুশাখালী ইউনিয়নে তাঁর বেশ সুনাম রয়েছে।
ফরাশগঞ্জ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক আবু তাহের জানান, মুক্তিযোদ্ধা ও পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার মোমতাজ উদ্দিন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসক। সে কারণে রাজাকাররা সব সময় তাকে মেরে ফেলার জন্য খেঁাজ করতেন। যুদ্ধকালীন সময়ে স্থানীয় মান্দারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজাকার সর্দার ননী মুক্তিযোদ্ধা মমতাজের মাথার বিনিময়ে পুরস্কার ঘোষণা করেন। তাই জীবন বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে রাজাকারদের ভয়ে তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের পোড়াখালী খালের স্রোতে ভেসে মান্দারী ইউনিয়নের গন্ধর্ব্যপুর থেকে পালিয়ে আসেন ফরাশগঞ্জে। জনমানবহীন এই গ্রামে এসে তিনি শিক্ষার্থী পড়াতেন ও গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন। ফলে তিনিই এ গ্রামের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা। তবে রাষ্ট্রীয় ভাবে তিনি স্বীকৃতি পাননি। এটা দুঃখজনক।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সহকারি কমান্ডার আমির হোসেন মোল্লা বলেন, মোমতাজ ভাই ছিলেন আমাদের যুদ্ধের তথ্যদাতা । রামগঞ্জ, ফেনী সীমান্তে এবং লক্ষীপুরের বাগবাড়িতে যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার জয়নাল আবেদীন এর অধীনে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন ক্যাম্পে তাকে নিয়ে যেত আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করাতেন। স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য আজও তাঁর স্বীকৃতি পায়নি তিনি।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক উপজেলা কমান্ডার মাহবুবুল আলম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে তার নাম তালিকাভুক্তি করতে পারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। আমরা তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করে প্রত্যয়ন দিয়েছি চিঠিও পাঠিয়েছি মন্ত্রণালয়ে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও জেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শাহাজান কামাল (এমপি) ২০১৬ সালের মার্চ মাসে মমতাজ উদ্দিনকে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন।
এছাড়াও লক্ষ্মীপুর মিু্ক্তযোদ্ধা সাবেক জেলা কমান্ডার আনোয়ারুল হক মাস্টারও ডা. মোমতাজ উদ্দিনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করে তালিকাভুক্তি করার জন্য প্রত্যয়ন করেছেন ২০১৩ সালে। তিনি তখন আক্ষেপ করে বলেছেন এই পরিবারটি স্বীকৃতি বি ত মানে পুরো জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত আক্ষেপের ও কষ্টের। একটা প্রত্যয়ন দেয়া ছাড়াতো আমার আর কিছুই করার নেই।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য ২০১২ সালে তাঁর পরিবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন করেন। ডিজি নং—২০০৬৫। আবেদনের ১০ বছর চলে গেলেও আজও মেলেনি তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। একাধিক জাতীয় গণমাধ্যম ও টিভি চ্যানেল তাঁকে নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্ত ২০১৭ সালের জেলা যাচাই—বাচাই কমিটি তার তার নামটি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের খ তালিকায় প্রেরণ করে।
বিষয়টি জানতে চাইলে সমাজসেবা অফিসের সূত্র জানা যায়, যাচাই—বাচাইয়ের প্রতিবেদনে ৭ সদস্যদের কমিটির মধ্যে ৬জন সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মমতাজ উদ্দিনকে সমর্থন করলেও একজন সদস্য অজ্ঞাত কারণে কোন মন্তব্য করেন নি। পরবর্তীতে সে সদস্যও মমতাজ উদ্দিনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সমর্থন করে প্রত্যয়ন দেন। কিন্তু সেটি পাঠানোর প্রক্রিয়া না থাকায় তালিকাভুক্তি থেকে বাদ পড়েছে মুক্তিযোদ্ধা মোমতাজ।