Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

লক্ষ্মীপুরে হত্যাকাণ্ড: এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ, জনমনে ক্ষোভ


প্রকাশের সময় : ১ বছর আগে
লক্ষ্মীপুরে হত্যাকাণ্ড: এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ, জনমনে ক্ষোভ

লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকার ব্রিজের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। জানা যায়, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

নিহত নোমান জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মৃত আবুল কাশেমের ছেলে, রাকিব জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও রফিক উল্যাহর ছেলে এবং বশিকপুর ইউপি ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান আবুল কাশেম জেহাদী ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তাদের গুলি করে হত্যা করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে সদর উপজেলার পোদ্দার বাজার থেকে নাগের হাটে যাচ্ছিলেন যুবলীগ নেতা নোমান ও তাঁর সহযোগী ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম। পশ্চিম বাজার এলাকার ব্রিজের পাশে পৌঁছালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁদের গতিরোধ করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত রাকিব ইমামকে উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনিও মারা যান। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সদর হাসপাতালের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উত্তর তেমহুনীতে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। নিহত আবদুল্লাহ আল নোমান দুই সন্তানের জনক। দুই নেতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্বজনসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহত নোমান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের ভাই। নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বাহিনীর প্রধান আবুল কাশেম জেহাদী পরিকল্পিতভাবে তাদের দুজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। কাশেম আমার সঙ্গে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হেরেছিল। এরপর থেকে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে। এর জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে জিহাদী বাহিনী। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।’

স্থানীয়রা জানায়, বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জেহাদী গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাহফুজুর রহমান। এতে আবুল কাশেম জেহাদীর ভরাডুবি হয়। ওই নির্বাচন নিয়েই কাশেম ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে মাহফুজ-নোমান গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে পরিকল্পিতভাবে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন দলীয় নেতারা।’

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা যুবলীগের সভাপতি একে এম সালাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘আমার সঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে কারও গায়ে কখনো একটি টোকাও দেয়নি। সে ছিল যুবলীগের আইকন। তার এইভাবে মৃত্যু হবে, সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাবিক ঈমামও ভালো নম্র-ভদ্র ছিল।’

মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে আজ বুধবার জোহরের নামাজের পর নিজ এলাকায় বশিকপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দুজনকে দাফন করা হবে বলে জানান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন তিনি। দুজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। অপরাধী যত বড়ই হোক, তাদের রেহাই নেই। ধরা পড়বেই।’