Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

৫ হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা ডাকাতিয়া নদীকে ‘বদ্ধ জলমহাল’ দেখিয়ে ইজারা দেওয়ার অভিযোগ


প্রকাশের সময় : ২ years ago
৫ হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা ডাকাতিয়া নদীকে ‘বদ্ধ জলমহাল’ দেখিয়ে ইজারা দেওয়ার অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার প্রবহমান ডাকাতিয়া নদীকে দেখানো হয়েছে ‘বদ্ধ জলমহাল’ হিসেবে। এভাবে একটা নদীকে কাগজে—কলমে পাল্টে ফেলে সেটিকে আনা হয়েছে ইজারার আওতায়। এছাড়াও পৌর কতৃর্পক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ের গেজেট বিজ্ঞপ্তিকে আড়াল করে নদী ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলে অবাধে মাছ ধরার অধিকার থেকে বি ত হন দরিদ্র জেলেরা। ফের চলতি মাসে আগামি ২২ ফেব্রুয়ারি প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীকে ‘বদ্ধ জলমহাল’ উল্লেখ করে নদীটিকে মৎস্যজীবী সমিতির কাছে ইজারা দেওয়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পৌর কতৃর্পক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রায়পুরের ডাকাতিয়া নদীকে মূলত ইজারার আওতায় আনতেই কৌশলে পৌর কতৃর্পক্ষ এর নাম পরিবর্তন করেন। স¤প্রতি একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে একে ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে চূড়ান্ত। এ অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে নদীর পাড়ের ৫ হাজার একর জমিতে বোরো ধান আবাদে সেচ সুবিধা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় মানুষ। জনস্বার্থে নদীটির ইজারা বাতিলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ইউএনও এবং জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু তা আজও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ফের পৌর কতৃর্পক্ষ নদীতে আবারও ইজারার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সাধারণ মানুষের মাঝে।

ডাকাতিয়া নদী রক্ষা আন্দলনের সাথে জড়িত ঢাকার বিশিষ্ট সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেন, ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নদী ও জলাভূমিকে স্পষ্টভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। চলমান নদীকে কোনো অবস্থায়ই বদ্ধ জলমহাল বলা যাবে না। নদীকে বদ্ধ জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। রায়পুরের এই ডাকাতিয়া নদী রক্ষায় আমার বিভিন্ন আন্দলন করে কিছুটা উদ্ধার করেছি। পৌর মেয়ন নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তিনি মেয়র হলে ডাকাতিয়া নদী উম্মক্ত করে দিবেন। কিন্তু আজ তিনি মেয়র হয়ে নিজেই এখন নদী অবৈধ ভাবে ইজাড়া দিচ্ছে। বিষয়টি খুই দুঃখজনক।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে রায়পুর পৌর সভার অংশের ডাকাতিয়া নদীকে ‘জলমহাল’ ঘোষণা করে একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়ার উদ্যোগ নেন মেয়র। পরে ২০২০ সালে রায়পুরে কৃতিসন্তান বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের অ্যাঢভোকেট সালাউদ্দিন রিগ্যান উন্মুক্ত নদী উল্লেখ করে ইজারা বন্দোবস্ত বাতিল করতে একটি স্বত্ব মামলা করেন। পরে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘দরিদ্র জেলে স¤প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণার্থে এবং তাঁদের জীবিকা নির্বাহে সরকার নদী, খাল ও উন্মুক্ত শ্রেণির ছড়া; যা জলমহালের আওতায় রয়েছে সেগুলোর ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ পরে রিগ্যান লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক, রায়পুরের ইউএনও এবং পৌর সভার ওই রায়ের চিঠি পাঠান। এতে ডাকাতিয়া নদীর কিছু অংশ উন্মক্ত করে দেয় অবৈধ লিজ নেওয়া দখলধারা। কিন্তু পৌর সভার অংশ আজও উন্মক্ত হয়নি।

রায়পুর পৌর শহরের বাসিন্দা স্বপন আহম্মেদ, আজম চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন বলেন, বর্ষায় পৌর এলাকার নেমে আসা ঢলের পানি এই নদী দিয়েই নিষ্কাশিত হয়। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী মাটির বাঁধ স্থাপন করে পানি সেচের মাধ্যমে নদীর দু’পাড়ের প্রায় ২০টি গ্রামের ৫ হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ হয়। নদীটি ইজারা দেওয়া হলে সেচ সুবিধার অভাবে আবাদ ব্যাহত হবে। এলাকার দরিদ্র জেলেরা নদীতে মাছ ধরার অধিকারও হারাবেন।

সুপ্রিমকোর্টের অ্যাঢভোকেট সালাউদ্দিন রিগ্যান বলেন, ডাকাতিয়া নদী কিসের ভিত্তিতে ‘বদ্ধ জলমহাল’ করা হলো। এ বিষয়ে আমি পৌর সভার মেয়র ও উপজেলার ভূমি কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

রায়পুর পৌর সভার সচিব আবদুল কাদের বলেন, ‘বদ্ধ জলমহাল হিসেবে আমরা ডাকাতিয়া নদী ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ডাকাতিয়া নদী যদি উন্মুক্ত নদী হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে বদ্ধ জলমহাল হিসেবে নথিভুক্ত সেটি দেখার বিষয়। তবে মেয়র সাহেবের নির্দেশে নদীর ইজাড়ার দরপত্র বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ বলেন, নদী কোন ভাবেই ইজাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। আমি বিষয়টি জানতে পেরেই ডাকাতিয়া নদী ইজাড়ার দরপত্র বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারসহ এমপি মহোদয়কেও অবগতি করেছি। তাই নদী আর ইজাড়া দেওয়া হবে না।