Ad Space 100*120
Ad Space 100*120

দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নানামুখী চাপের মুখে বলছে টিআইবি


প্রকাশের সময় : ২ years ago
দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নানামুখী চাপের মুখে বলছে টিআইবি
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর ২০২১: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্যাপন করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে: সবার অধিকার, সবার দায়িত্ব’ এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি উদ্যাপনে জাতীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং কার্টুন প্রতিযোগিতার পুরস্কার ঘোষণা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত মানববন্ধনে ঢাকাসহ সারাদেশের ৪৫টি অঞ্চলের সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), স্বচ্ছতার জন্য নাগরিক (স্বজন), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) এবং ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রæপের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি দেশব্যাপী সনাক, স্বজন, ইয়েস, ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রæপের আয়োজনে র‌্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১১.০০ টায় টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি আলোচনা এবং দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২১ ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোঅর্ডিনেটর জাফর সাদিক। এ সময় প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলি মাণিক, এমআরডিআই এর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হেল্প ডেস্কের প্রধান মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, গেøাবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের রোভিং এশিয়া এডিটর মিরাজ আহমেদ চৌধুরী এবং একাত্তর টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুজন কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে গণমাধ্যম সংখ্যায় অনেক, তবে সবাই সমান পেশাদারিত্ব দেখান না। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের অনেক ধরণের মধ্যে একটি হলো গণমাধ্যমের সংখ্যা বাড়িয়ে, তার মান কমানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা। দেশে বর্তমানে তাই চলছে। আমাদের উচিত, মানসম্মত গণমাধ্যমকে উৎসাহিত করা।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ে তারা বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সবসময়ই চ্যালেঞ্জ ছিলো ও থাকবে। তাই বলে সমস্যার কারণে কাজ থামিয়ে দেয়া যাবে না। বিকল্পভাবে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। বর্তমানে দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুণগত দিক আরও উন্নত করার সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিকভাবে যুথবদ্ধ হয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। সাংবাদিকতা পেশায় আপসের কোনও সুযোগ নেই। সেলফ সেন্সরশিপ কেন করতে হবে? সাংবাদিকতা করতে হলে পেশায় টিকে থাকতেই হবে। হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার যে পরিবেশ দরকার, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের। তারা সেটা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আমাদের সংবিধানও সেটা নিশ্চিত করেছে। গণমাধ্যমসহ সকল সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পরিবেশ সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ধরণের চাপ, বিশেষ করে- বাকস্বাধীনতাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার চর্চা থেকে বিরত রাখার জন্য একধরণের প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের সংবিধান এটি সমর্থন করে না।”
আলোচনা শেষে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২১ ঘোষণা করা হয়। এবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট দুইজন ক্যামেরাপারসনসহ ১০ জন সাংবাদিককে এই পুরস্কার দেয়া হয়। আঞ্চলিক সংবাদপত্র বিভাগে যৌথভাবে এ পুরস্কার অর্জন করেন সিলেটের ‘সিলেট ভয়েজ ডট কম’ এর রিপোর্টার শরীফ উদ্দিন তানু মিয়া এবং খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চলের স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আলাউদ্দিন। জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে বিজয়ী হন ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকার সাবেক স্টাফ রিপোর্টার আহমেদ জায়িফ। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া- প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করেন, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সিনিয়র রিপোর্টার মুহাম্মদ মুকিমুল আহসান হিমেল। আর জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিষয়ক জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন অনলাইন পত্রিকা রাইজিং বিডি ডট কমের প্রতিবেদক মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং টেলিভিশন বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মুফতি পারভেজ নাদির রেজা। টিভি প্রতিবেদন তৈরিতে ভিডিওগ্রাফিতে বিশেষ অবদান রাখায় একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন মোঃ আলম হোসাইন এবং চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সিনিয়র ক্যামেরাপারসন মোমিনুল হক আফান বিচারকদের বিবেচনায় বিশেষ সম্মাননা অর্জন করেছেন। বিজয়ীদের প্রত্যেকে ব্যক্তিগত সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা পুরস্কার লাভ করেন। যৌথভাবে বিজয়ীদের পুরস্কারের অর্থ সমান দুইভাগ করে প্রদান করা হয়। বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্ত ক্যামেরাপারসনদের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে বিজয়ী হয়েছে মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘উন্মোচন’। ‘ঢাকার মালিক কত?’ এবং ‘ভাতা যাচ্ছে ভূতের পেটে!’ শিরোনামে প্রচারিত দুটি অনুষ্ঠানের জন্য উন্মোচন টিম এই পুরস্কার অর্জন করে। বিজয়ী প্রতিটি প্রামাণ্য প্রতিবেদন আলাদা সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট এবং সর্বমোট এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার পুরস্কার লাভ করেছে।
একইদিন বিকাল ৩টায় ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা ২০২১’ এর পুরস্কার ঘোষণা এবং সপ্তাহব্যাপী কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন সুজান ম্যুলার, ব্রিটিশ হাই কমিশনের গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল টিমের কাউন্সিলর টম বার্জ, সুইডেন দূতাবাসের সেকেÐ সেক্রেটারি পাওলা ক্যাস্ট্র নিডারস্টাম এবং দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতার বিচারক কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবিব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এসময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতি এমন একটি ব্যাধি, যা রুখতে হলে সকলকে সমষ্টিগতভাবে লড়তে হবে। তরুণসহ পুরো সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারেরও দায়িত্ব এ ব্যাপারে পরিবেশ সৃষ্টি করা।”  আর ড. পারভীন হাসান বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে কার্টুন একটি দারুণ মাধ্যম। এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তরুণদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
‘অতিমারিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে প্রভাব’ বিষয়ক আয়োজিত ১৬তম কার্টুন প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে (১৩-১৮) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষাথী মোঃ ইসমাইল মাহমুদ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের মুগ্ধ রায় নিবিড়, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের মোঃ সাকলাইন মোস্তাক সাফি। আর ‘খ’ বিভাগে (১৯-২৫) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর মালেক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজন নন্দী এবং সিটি কলেজের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী রেহনুমা প্রসূন। উভয় গ্রæপের বিজয়ী তিনজনকে যথাক্রমে ৭৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। এছাড়া দু’টি বিভাগ থেকে মোট ৩৩ জন কার্টুনিস্টকে বিশেষ মনোনয়ন দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, এছর দু’টি বিভাগে ১১৮ জন কার্টুনিস্টের আঁকা মোট ১৬৮টি কার্টুন জমা পড়ে। কার্টুন প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়ন প্রাপ্ত ৩৩ জন কার্টুনিস্টের মোট ৫৩টি কার্টুন নিয়ে আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ের লেভেল ৫-এ সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনেও এই প্রদর্শনী চলবে।